শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন
নিজেস্ব প্রতিবেদন: ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১৩৮ কাঠা জমির মালিক বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত প্রধান ব্যক্তি ও ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। এই জমি বিক্রির জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। দ্রুততম সময়ে যাতে এ জমি বিক্রি করা যায়, সে জন্য একাধিক লোকও নিযুক্ত করেছেন।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে শেখ আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ৫৮টি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক, বেসিক ব্যাংক সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযোগপত্র দাখিলের পরপরই দুই প্লটের ওই জমি বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়। যদিও চার মাস ধরে চেষ্টা করেও যথাযথ ক্রেতার সন্ধান পাননি শেখ আবদুল হাই। একবারে কেউ টাকা শোধ করলে বাজারদরের চেয়ে সস্তায় ওই জমি বিক্রি করতে তিনি রাজি বলেও জানা গেছে। তাঁর পক্ষে এ জমি বেচার দায়িত্ব পালন করছেন বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তি। বসুন্ধরার স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি আবদুল হাইয়ের সম্পত্তি দেখাশোনা করার ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় ২০১২ সালে শেখ আবদুল হাই এই দুই প্লটের মালিক হন।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের ৭১৯ ও ৭২০ নম্বরধারী প্লটের আয়তন ২২৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ৩৩ শতাংশে ১ বিঘা হিসাবে প্লট দুটির আয়তন ৬ দশমিক ৯ বিঘা, অর্থাৎ প্রায় ৭ বিঘা। ২০ কাঠায় ১ বিঘা হিসাবে পুরো সম্পত্তির পরিমাণ ১৩৮ কাঠা। অভিযোগপত্র দাখিলের কয়েক মাস হলেও শেখ আবদুল হাইয়ের নামে এখনো কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়নি। দুদক বলছে, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতে আত্মসমর্পণ ছাড়া আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। জমি বিক্রির বিষয়ে শেখ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেনের সঙ্গে গতকাল শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শেখ আবদুল হাই দেশেই আছেন। আর ১৩৮ কাঠা সম্পত্তির বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে কোনো সম্পত্তি তিনি বিক্রি করতে চাইতেই পারেন।
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, মোট পরিমাণের মধ্যে সিএস ও এসএ ৩৩৬৯ নম্বর দাগে ২৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, ৩৩৭০ নম্বর দাগে ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ, ৩৩৭১ নম্বর দাগে ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ৩৩৭২ নম্বর দাগে ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ জমি রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১৯ অক্টোবর গিয়ে দেখা যায়, পুরো জমি লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দুটি প্লটের মাঝখানেও একটি দেয়াল রয়েছে। প্লট দুটির লাগোয়া চারদিকে রয়েছে ৮০ ফুট রাস্তা। উত্তরে অনেক আবাসিক ভবন রয়েছে। দক্ষিণে নির্মাণাধীন একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও একটি আবাসন কোম্পানির সাইনবোর্ড-সংবলিত ভবন। পশ্চিমে বিদ্যুতের একটি উপকেন্দ্র এবং পূর্বে রাস্তাসংলগ্ন একটি বাড়ি। শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চুর ১৩৮ কাঠা জমি বিক্রির কাজে নিয়োজিত বাবুল মিয়ার সঙ্গে ৫ নভেম্বর মুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। জমি বিক্রির হালনাগাদ তথ্য জানতে চাইলে বাবুল মিয়া বলেন, তিনি শেখ আবদুল হাইয়ের গাড়িচালক ছিলেন। এক মাস ধরে তিনি অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে কিছু জানেন না।